রূপাঞ্জন গোস্বামী-র লেখা থেকে সংগৃহীত
লাস্ট উইল অ্যান্ড পলিটিক্যাল টেস্টামেন্ট-এ সাক্ষী হিসেবে সই করেছিলেন হিটলারের প্রচার সচিব কুখ্যাত ডক্টর জোসেফ গোয়েবলস এবং হিটলারের প্রাইভেট সেক্রেটারি কর্নেল মার্টিন বরম্যান।
রাশিয়ার হাতে শোচনীয় পরাজয় আসন্ন। ১৯৪৫ সালের জানুয়ারিতে হিটলার ফিরে এলেন তাঁর বার্লিনের জার্মান চ্যান্সেলরের কার্যালয় ‘রিখ চ্যান্সেলরি’তে। দুর্গসদৃশ চ্যান্সেলরির পিছন দিকে অত্যন্ত সুরক্ষিত একটি উদ্যান। উদ্যানটির ঠিক তলায়, মাটির নীচে অবস্থিত ফুয়েরার-এর (পথপ্রদর্শক) বাঙ্কার। মাটি থেকে আঠাশ ফুট নীচে, দশ ফুট পুরু সিমেন্টের ঢালাই করা দেওয়াল দিয়ে ঘেরা অত্যাধুনিক সুবিধাযুক্ত তিন হাজার স্কোয়ার ফিটের বাঙ্কার। এই বাঙ্কারটিই আজ দুনিয়া কাঁপানো হিটলারের শেষ আশ্রয়স্থল।
রাশিয়ান ফৌজ পোলান্ড হয়ে পূর্ব জার্মানির দরজায় কড়া নাড়ছে। লালফৌজ ও মিত্রবাহিনীর কার্পেট বম্বিং-এ বার্লিন সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত। এপ্রিলের শুরুতেই প্রায় ২৫ লক্ষ রাশিয়ান সেনা বার্লিন ঘিরে ফেলেছিল। দুসপ্তাহ পরে তারা এখন বার্লিনের প্রাণকেন্দ্রে ঢুকে পড়ছে। হিটলারের বাঙ্কার থেকে আর তারা মাত্র কয়েক কিলোমিটার দূরে।
শেষের শুরু
২৯ শে এপ্রিল হিটলার খবর পেলেন তাঁর মিত্র ইতালির সর্বাধিনায়ক মুসোলিনি এবং তাঁর মিস্ট্রেস ক্লারেট্টা পেতাচ্চিকে নির্মম ভাবে হত্যা করে শবদেহগুলিকে জনসমক্ষে লাঞ্ছিত করা হয়েছে। এরপর এসেছিল আরেকটি দুঃসংবাদ, চরম দুঃসংবাদ। যা হিটলারের পায়ের তলা থেকে মাটি সরিয়ে নিয়েছিল। হিটলার খবর পেলেন তাঁর শেষ ভরসা স্টেইন বাহিনী শোচনীয় পরাজয়ের সামনে দাঁড়িয়ে। রাশিয়ান সেনাদের চক্রব্যূহ ভেদ করে পালানোর রাস্তা তৈরি করার শেষ চেষ্টাও ব্যর্থ হয়েছে।
২৯ শে এপ্রিল হিটলার খবর পেলেন তাঁর মিত্র ইতালির সর্বাধিনায়ক মুসোলিনি এবং তাঁর মিস্ট্রেস ক্লারেট্টা পেতাচ্চিকে নির্মম ভাবে হত্যা করে শবদেহগুলিকে জনসমক্ষে লাঞ্ছিত করা হয়েছে। এরপর এসেছিল আরেকটি দুঃসংবাদ, চরম দুঃসংবাদ। যা হিটলারের পায়ের তলা থেকে মাটি সরিয়ে নিয়েছিল। হিটলার খবর পেলেন তাঁর শেষ ভরসা স্টেইন বাহিনী শোচনীয় পরাজয়ের সামনে দাঁড়িয়ে। রাশিয়ান সেনাদের চক্রব্যূহ ভেদ করে পালানোর রাস্তা তৈরি করার শেষ চেষ্টাও ব্যর্থ হয়েছে।
সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললেন হিটলার । তাঁর ও ইভার জীবনের শেষ মুহূর্ত মুসোলিনি ও তাঁর সঙ্গিনীর মতো হবে না। কাপুরুষের মতো জীবিত অবস্থায় ধরা দেবেন না বিশ্বত্রাস হিটলার। তিনি তাঁর সহচরদের শেষের শুরু করতে বললেন। কয়েক ঘণ্টা আগেই হিটলার ও ইভা ব্রাউনের বিয়ে হয়েছে গেছে এই বাঙ্কারেরই স্টাডি রুমে। )
আত্মহত্যা করার ঠিক আগের দিন অর্থাৎ ২৯ শে এপ্রিল বিকেল থেকে হিটলার বাঙ্কারের ঘরে ঘরে ঢুকে তাঁর বিশ্বস্ত লোকদের সঙ্গে করমর্দন করেন ও তাঁদের ধন্যবাদ দেন ফুয়েরারের পাশে থাকার জন্য। সেদিনই ভোর চারটের সময় হিটলার তাঁর সেই বিখ্যাত উইল লেখান তাঁর এক মহিলা সেক্রেটারি গাট্রুড জাঁগেকে দিয়ে। লাস্ট উইল অ্যান্ড পলিটিক্যাল টেস্টামেন্ট-এ সাক্ষী হিসেবে সই করলেন হিটলারের প্রচার সচিব কুখ্যাত ডক্টর জোসেফ গোয়েবলস এবং হিটলারের প্রাইভেট সেক্রেটারি কর্নেল মার্টিন বরম্যান।
শেষ ইচ্ছাপত্র
“যেহেতু আমি সংগ্রামের বছরগুলিতে বিবাহের দায়ভার নিতে সক্ষম ছিলাম না, আজ আমার পৃথিবীর পালা সাঙ্গ করার আগে মনস্থির করেছি, সেই মহিলাকে স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করব, যিনি বহুবছরের বিশ্বস্ত বন্ধুত্বের পর স্বেচ্ছায় এই অবরুদ্ধ শহরের বাঙ্কারে প্রবেশ করেছেন এবং আমার পরিণতির সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে নিয়েছেন। তাঁর ইচ্ছাতেই তিনি আমার সঙ্গে মৃত্যুবরণ করতে চলেছেন। সাধারণ মানুষকে আমার সময় দিয়ে দেওয়ার কারণে যেটা আমরা দুজন হারিয়ে ফেলেছিলাম, এই মৃত্যু সেই অভাব পূরণ করবে।
আমার যা কিছু সম্পত্তি, যদি তার আদৌ কোনও দাম থেকে থাকে ,তা পার্টিকে দেওয়া হবে। যদি পার্টির অস্তিত্ব না থাকে তা হলে দেশকে দেওয়া হবে। যদি দেশও ধ্বংস হয়ে যায়, তা হলে আমার মতামতকে গুরুত্ব দেওয়ার কোনও প্রয়োজন নেই। আমার পেন্টিংগুলি, যা আমি বহু বছর ধরে সংগ্রহ করেছি, সেগুলি কোনও ব্যক্তিগত সংগ্রহে রাখা যাবে না। একমাত্র আমার হোমটাউন লিঞ্জ অন ডোনাউয়ের গ্যালারিতে রাখা যাবে। আমি আন্তরিক ভাবে বিশ্বাস করি যে আমার ইচ্ছাগুলি ঠিক ঠিক ভাবে পালন করা হবে।
আমি আমার ইচ্ছাগুলি রূপায়িত করার জন্য আমার প্রতিনিধি হিসেবে বিশ্বস্ত পার্টি কমরেড মার্টিন বরম্যানকে দায়িত্ব দিলাম। তাঁকে সমস্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ব্যাপারে সম্পূর্ণ আইনি অধিকার দেওয়া হলো। তাঁকে এখান (বাঙ্কার) থেকে যে কোনও জিনিস নিয়ে যাওয়া অধিকার দেওয়া হলো। সেই জিনিসগুলি, যেগুলির সেন্টিমেন্টাল ভ্যালু আছে বা যেগুলি আমার ভাই বোনদের সাধারণ জীবনযাপনের উপযোগী হতে পারে। একই সঙ্গে উপরিউক্ত সব কিছুই আমার স্ত্রীয়ের মা ও সেই সমস্ত কর্মী যাঁরা কমরেড বরম্যানের অতিপরিচিত তাঁদেরও দেওয়া যেতে পারে। যেমন আমার পুরনো সেক্রেটারি ফ্রাউ উইন্টার-সহ আরও অনেকে যাঁরা বহু বছর ধরে আমাকে সাহায্য করেছেন।
আমি এবং আমার স্ত্রী অগৌরবের গ্রেফতার বা আত্মসমর্পণ এড়াতে মৃত্যুকেই বেছে নিলামI আমাদের ইচ্ছা আমাদের মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে আমাদের শরীর যেন জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। সেখানেই যেন জ্বালানো হয়, যেখান থেকে আমি বারো বছর ধরে সাধারণ মানুষের জন্য আমার দৈনন্দিন কার্যাবলী পরিচালনা করতাম।
দেহরক্ষীরা হিটলারের গোপন কাগজ পত্র পুড়িয়ে ফেলতে লাগল। বাঙ্কারের চিকিৎসকদের বলা হলো হিটলারের প্রিয় কুকুর ব্লন্ডি ও ইভার স্প্যানিয়েলটিকে পটাসিয়াম সায়ানাইড বিষ দিয়ে মেরে ফেলতে। হিটলার নিজে দাঁড়িয়ে থেকে প্রিয় পোষ্যদের মৃত্যু দেখলেন ভাবলেশহীন দৃষ্টিতে।
হিটলার তাঁর চিকিৎসকদেরদের জিজ্ঞেস করলেন আত্মহত্যার সবচেয়ে সহজ উপায় কী? তাঁরা বললেন,পটাসিয়াম সায়ানাইড ক্যাপসুল দাঁত দিয়ে ভাঙা এবং পরমুহূর্তে মাথায় গুলি চালানো। ১৯৪৫-এর ৩০ এপ্রিল দুপুরে হিটলার স্ত্রী ইভার সঙ্গে প্রবেশ করেছিলেন বাঙ্কারের স্টাডি রুমে। কয়েক মিনিট পরেই বন্ধ দরজার ওপার থেকে ভেসে এসেছিল গুলির শব্দ।
দরজা ভেঙে স্টাডি রুমে প্রবেশ করেছিলেন ফুয়েরারের সঙ্গীরা। ইভা শুধু সায়ানাইড খেয়েছিলেন, কিন্তু হিটলার সায়ানাইড ক্যাপসুলের দাঁত দিয়ে ভাঙার সঙ্গে সঙ্গে এবং নিজের মাথায় গুলি করে মৃত্যুকে ডেকে নিয়েছিলেন। সায়ানাইডকে পুরোপুরি বিশ্বাস করতে পারেননি হিটলার। বিশ্বাস করতে পারেননি নিজের মৃত্যুকেও।
Comments
Post a Comment